Header Ads

জল-জংগলের কাব্য

দারুন কাব্যিক একটা নাম থাকা সত্ত্বেও স্থানীয়রা এটাকে "পাইলট বাড়ী" নামেই বেশী চেনেন। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ রিসোর্টটি কিন্তু বাণিজ্যিক ভাবে শুরু হয় নি। বিমান বাহিনী থেকে অবসর নিয়ে এর সত্ত্বাধিকারী রচনা করতে চেয়েছিলেন এক প্রকৃতির কাব্য। যেখানে জল ও জঙ্গল নিজেদের মতো থাকবে আর তিনি সে জংগলের মধ্যে ঘুরে বেড়াবেন একা, প্রকৃতিচারী হিসেবে,আর শুনবেন তিনি জল-জংগলের ফিসফিস কথোপকথনঃ

 ‘'তুমি আছ, আমি আছি!!!!
পাশা-পাশি, কাছা-কাছি!!!!!"



সব পোকা-মাকড়, পাখ-পাখালি বেড়ে উঠবে অবাধ স্বাধীনতায়,  নিজেদের মতো করে। সবকিছু ঠিক রেখে মাঝে-মধ্যে বসবে কবি ও সাহিত্যিকদের আড্ডা। লোক-শিল্পীরা এখানে এসে দুদণ্ড শান্তি পাবে, মনের আনন্দে গাইবে ঋতু বৈচিত্রময় বাংলার জারি-সারি আরও নাম না জানা  বিভিন্ন লোকসংগীত। কিন্তু সব ভাবনা নিজেরমতো করে বাস্তবায়িত হয় না হয় তো বেশিরভাগ সময়জুড়েই। কিছুদিন যেতেই অতি-বেহিসেবি লোকটিও বুঝে ফেললেন নিজের গ্যাঁটের পয়সা দিয়ে এ আয়োজনের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বহন করা তারপক্ষে প্রায় অসম্ভব। খরচ যোগাতে বাণিজ্যিক ভাবে উন্মুক্ত করে দিতে হল সবার জন্য। তাই আমরা এখন জল-জংগলে ঘুরতে যেতেই পারি। গ্রামীণ পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে পুরদস্তুর ভাবে। ১০-১২টা শেড রয়েছে পুরো এলাকায়। ঘুরতে আসা গ্রুপের সদস্য সংখ্যা অনুসারে শেড বন্টন করা হয়। প্রতিটি শেডের আলাদা নাম আছে। যেমন ---


বকুলতলা,
বটতলা সহ

আরও হরেক বাঙালিয়ানা নাম ।রিসোর্টের মাঝখানটা দেখতে একদম গ্রামীণ হাটের মত!!! একদিকে ঢাক আর দো-তারার সুরে গায়েন গেয়ে উঠেন লোকসংগীত। একপাশে ঢেঁকীতে চাল গুড়া করা হচ্ছে, চালের আটা দিয়ে রুটি আর চিতই পিঠা তৈরী হবে। এক পাশে বিশাল হেসেলঘর- সবচেয়ে ব্যাস্ততম জায়গা এই পুরো এলাকাটির। ৭-৮ জন পুরোদমে খাবার প্রস্তুত করছেন। একদিকে বেশ বড়সর পরিসরে চা-ঘর, একজন অবিরাম চা-কফি বানাচ্ছেন। সারাদিনে যত কাপ ইচ্ছা এই অমৃতসুধায় ডুব দিয়ে থাকতে পারবেন, আলাদা ভাবে কোনো টাকা-পয়সা দিতে হবে না। চা-ঘরের পাশেই গাছের ছায়াতে বসে আড্ডার জমপেশ ব্যবস্থা। আপনি সারাটিদিন বসে বসে হাতি-ঘোরা মারেন আর  অ্যামেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা নিয়ে মাথা কপচান না কেন কেউ নিষেধ করবে না। পাশেই বেশ কয়েকটি নৌকা বাঁধা। ইচ্ছা হলে জলের সাথে সখ্যতা করে আসেন। বিলের খানিকটা ভেতর গেলেই দেখতে পাবেন সারি-সারি ছোট নৌকাতে মৎস্য শিকারিরা পানির দিকে অধির আগ্রহে বকের মতো তাকিয়ে আছেন মাছ পাবার আশায়। বিলে শাপলার অভাব নেই। জল-জংগলে এখন প্রায় ২০ জন লোক কাজ করেন। সকল কর্মীই জল-জংগলের প্রতিবেশী। জল-জংগলের কাব্যে গেলে সবার মনেই একটা কমন প্রশ্ন ঘুর-পাক খায়ঃ


*রিসোর্টটির আয়তন কত?

 রিসোর্ট সংশ্লিষ্ট সবাই বলেন ৯০ বিঘা। সঠিক তথ্যটি হচ্ছে প্রায় ৭৫ বিঘা (তথ্যসূত্রঃ কামাল মাহমুদ, সত্ত্বাধিকারী, জল-জঙ্গল)। রিসোর্টটির নিজস্ব ভূমি ৭৫ বিঘা হলেও এটি বিস্তীর্ণ ও দিগন্তসম বিলের সাথে সংযুক্ত তাই জল কাব্য মাপ-জোখের মধ্যে না রাখাই ভালো। আমরা সবাই সকালে যে পরিমাণ খাবার খাই তাঁর প্রায় ২ থেকে ৩ গুন বেশি। অবশ্য ১২ পদের এই বিশাল পরিবেশন আর জিভে জল আনা সুস্বাদু খাবার হওয়ার কারণেই এতটা খেয়ে সকালটা শুরু করেছি । তারপর তো নৌ ভ্রমন। নৌ ভ্রমন শেষে আমরা নেমে গেলাম প্রায় ৮ বিঘার বিশাল পুকুরে। যে যার মতো লাইফ জ্যাকেট আর বয়া নিয়ে ভেসে পরলাম পানিতে। প্রকৃতি আমাদের প্রতি বড়ই সদয়। কিছুক্ষনের মধ্যেই নামলো ঝুম বৃষ্টি; বৃষ্টির ধারা এতোই বেশী যে ১০ ফিট দুরেও ভালো করে দেখা যায় না। পানির ১০-১২ ইঞ্চি নিচে মাথা ডুবিয়ে কেউ বৃষ্টির শব্দ শুনেছেন কখনো???জল তরঙ্গের মতো শুনতে লাগে!!!! আমি এই প্রথম শুনলাম, অবশ্য কৃতিত্ব পুরোটা সফরসঙ্গী আনোয়ার ভাইয়েরই থাকবে। প্রায় ৩ ঘণ্টা পানিতে দাপাদাপি করে আমরা গোসল শেষ করলাম। দুপুরের খাবার পরিবেশিত হলো ২০ পদ দিয়ে। খাবার খেয়ে আমরা পুরো রিসোর্ট ঘুরেছি ও আড্ডা দিয়েছি। এবার নিয়ে আমি গত ৪ বছরে জল-জংগলের ৫ বার গেলাম। প্রতিবারই নতুন-নতুন আনন্দ সাথে নিয়ে ফিরেছি। এবার আমরা গ্রুপে মোট ১০ জন ছিলাম। পুবাইল কলেজগেট থেকে জল-জংগলের কাব্য মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরত্বের। জয়দেবপুর - রাজবাড়ির পাশদিয়েও যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে গেলে টঙ্গী স্টেশন রোড বা ৩০০ ফিট দিয়ে যাওয়া যায়। জল-জংগলের কাব্য পুবাইল, ডেমুরপাড়াতে অবস্থিত।



জল জঙ্গলের কাব্য, পুবাইল, গাজীপুর।

খরচ : খরচটা একটু বেশী মনে হতে পারে।তবে খাবারের এই বিশাল বহর দেখলে তা আর মনে হবে না।

সারাদিন : ১৫০০ টাকা জনপ্রতি (সকালের সাস্তা, দুপুরের খাবার আর বিকেলে স্ন্যাক্স)

দিন রাত : ৩০০০ টাকা জনপ্রতি

শিশু (৫-১০ বছর), কাজের লোক ও ড্রাইভার : ৬০০ টাকা জনপ্রতি।

নাস্তায় যা থাকে : চিতই পিঠা, গুড়, লুচি, মাংশ, ভাজি, চা, মুড়ি

দুপুরের খাবার : ১০/১২ রকম দেশী আইটেম।মোটা চালের ভাত, পোলাও, মুরগির ঝোল, ছোট মাছ আর টক দিয়ে কচুমুখির ঝোল, দেশী রুই মাছ, ৩ রকমের ডাল, কয়েক রকমের ভর্তা এবং সবজি।

খাবারঃ: ১০/১০
পরিবেশঃ ১০/১০
ব্যবহারঃ ১০/১০

এক কথায় অসাধারণ খাওয়া এবং শহুরে জণ্জাল থেকে খানিকটা সময়ের জন্য হলেও কিছুটা অবকাশ যাপনের উপযুক্ত যায়গা।


Courtesy : Iqbal Hossain

No comments

Powered by Blogger.